জীবনীশক্তি ও ATP-এর ভূমিকা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) - জীবনীশক্তি | | NCTB BOOK

জীবনীশক্তি বা জৈবশক্তি (bioenergy) বলতে আমরা ভিন্ন বা বিশেষ কোনো শক্তিকে বুঝাই না। পদার্থবিজ্ঞানে শক্তির যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা থেকে এটি আলাদা কিছু নয়, জীবদেহ বা জৈব অণুর রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিকে এই নামে ডাকা হয় মাত্র। জীব প্রতিনিয়ত পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, সংগৃহীত শক্তিকে একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত করে, কখনো বা সঞ্চয় করে এবং শেষে সেই শক্তি আবার পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।

চিত্র 4.01: অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেটের (ADP) সাথে ফসফেট (P) যুক্ত হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠিত। হতে যতখানি শক্তি বাইরে থেকে সরবরাহ করা প্রয়োজন, ATP ভেঙে ADP ও ফসফেট উৎপাদন করলে প্রায় ততখানি শক্তি নির্গত হয়। জীবকোষে এই দুটি বিক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে।

DNA এবং RNA-এর গাঠনিক উপাদানগুলোর একটি হলো অ্যাডেনিন। এটি একটি নাইট্রোজেন বেস। এর সাথে পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট রাইবোজ সুপার অণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অ্যাডিনোসিন। অ্যাডিনোসিন অণুর সাথে পর্যায়ক্রমে একটি, দুটি এবং তিনটি ফসফেট/ফসফোরিক এসিড গ্রুপ যুক্ত হয়ে যথাক্রমে অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (AMP), অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট (ADP) এবং অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) গঠন করে। এভাবে ফসফেট যুক্ত করতে বাইরে থেকে শক্তি দিতে হয়। এই বিক্রিয়ার নাম ফসফোরাইলেশন (phosphorylation)। আবার এর বিপরীত প্রক্রিয়ায়, ফসফেট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হলে শক্তি বের হয়ে আসে। এই বিক্রিয়ার নাম ডিফসফোরাইলেশন (dephosphorylation)। উল্লেখ্য, প্রতিমোল ATP অণুর প্রান্তীয় ফসফেট গ্রুপে 7.3 কিলোক্যালরি (প্রায় 30.55 কিলোজুল) শক্তি জমা থাকতে পারে।

পরিবেশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে তাকে কোষের তথা জীবদেহের ব্যবহার-উপযোগী রূপে পরিবর্তিত করার জন্য কাজ করে দুটি কোষীয় অঙ্গাণু: মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড। উভয়েরই রয়েছে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নামক একসেট বিশেষ জৈব অণু, যাদের কাজ হলো বাহ্যিক শক্তি-উৎস থেকে আহরিত শক্তিকে ATP -এর ফসফেট গ্রুপের শক্তি হিসেবে জমা করা। মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্ষেত্রে সেই শক্তি-উৎস হতে পারে পুষ্টি উপাদান (যেমন: গ্লুকোজ) বা কোনো অন্তর্বর্তীকালীন অণু (যেমন: NADH₂) এবং প্লাস্টিডের (বিশেষত ক্লোরোপ্লাস্ট) ক্ষেত্রে সেই শক্তি-উৎস হলো সূর্যালোক বা অন্য কোনো উপযুক্ত উৎস থেকে আগত ফোটন। আবার, ATP-এর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে যে শক্তি বের হয়, সেই শক্তি দিয়ে জীবদেহের প্রতিটি জৈবনিক কাজ অর্থাৎ, মাংসপেশির সংকোচন থেকে ইন্দ্রিয়ানুভূতি, খাবার খাওয়া থেকে হজম করা, নিঃশ্বাস নেওয়া থেকে কথা বলা, চিৎকার করা থেকে হাসি-কান্না, দৈহিক বৃদ্ধি থেকে প্রজনন, দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখা থেকে শুরু করে দেহের প্রতিটি কোষের স্বাভাবিক আয়তন বজায় রাখা এর সবই সম্পন্ন হয়। আমরা যে খাবার খাই তা জারিত হয়, সেই জারণ থেকে নির্গত শক্তি দ্বারা ফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে আবার সেই ভাঙা দুই টুকরা জোড়া লেগে ATP তৈরি হয়। শক্তির প্রয়োজন হলে তা আবার ভাঙে। তারপর খাদ্য থেকে শক্তি নিয়ে আবার জোড়া লাগে। এ যেন এক রিচার্জেবল ব্যাটারি। ATP শক্তি জমা করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্য বিক্রিয়ায় শক্তি সরবরাহ করে। এজন্য ATP-কে অনেক সময় 'জৈবমুদ্রা' বা 'শক্তি মুদ্রা' (Biological coin or energy coin) বলা হয়।

Content added By
Promotion